সম্মুখ সমর
স্বপ্নে, ধারে বিক্রি করল ২৫ টাকার ডাঁটা যে যুবতী;
তাকে_জনসম্মুখে স্মরিতে নেই;
অযুত নিযুতের মাঝে প্রেম বিলোতে নেই!
স্বপ্নে বললে_
প্রেম নীরবে থাকুক বুকের ভেতর;
কে কবে বুঝেছে আবেদন; বেশিরভাগই ইতর!
খুবলে খেতে জানে শুধু দেহের ভাঁজ,
সব ঘুঁচে যাবে তোমার ফুরোলে লাজ।
তারপর সব বিরান ভূমি,
আসবে না দিতে তিক্ততা চুমি।
এসব কথা তোমার স্বপ্ন ভেঙেও মুখর কোরাস,
একচিলতে ঠাঁই নেই কোথাও কি বিরানবাস!
নিজের সাথে নিজের আলাপন,
ঘুরেফিরে হয় নিজেই ভিভাজন!
স্বপ্নে, ধারে বিক্রি করল ২৫ টাকার ডাঁটা যে যুবতী;
তাকে_জনসম্মুখে স্মরিতে নেই;
অযুত নিযুতের মাঝে প্রেম বিলোতে নেই!
আমাদের আমি
আমরা বেঁচে থাকি,
কেউ কেউ সুখে থাকে।
আমাদের ভেতর কড়া দীর্ঘশ্বাস,
তাদের অনবরত হাপিত্যেশ।
আমাদের খুব বেশি চাওয়া নেই,
ভেতরে হার্টবিটের ওঠানামা নেই,
কে কোথায় গেল, কি হলো;
এটা কেন ও রকম, সেটা কেন তেমন নয়,
কে কবে কোথায় কি খেয়ে,
খোসাটা ফেলে গেল, মাথা ব্যথা নেই;
আদতে আমাদের কিছুই নেই।
ফজুর মা'টা পোয়াতি হলো আবার,
দেলুর বউ কাল রাতে ছিলনা ঘরে;
শ্যামলের বোন ফের উধাও হলো,
পাড়ার কালুটাও নেই লোকে বলে।
এমন পাড়া জুড়ানো কথায় জুড়ে,
রোজ রাত্তিরে আসে শ্রান্তির ঘুম,
তবুও রাতদুপুরে আচমকা শব্দে,
হঠাৎ সাড়া দিলে অলিন্দ নিলয়,
কাত বদলে শুয়ে ঘুম দিই স্বচ্ছন্দ,
ভোর হলে হাসি মুখে বলি ভালো আছি।
আমরা বেঁচে থাকি,
কেউ কেউ সুখে থাকে।
শহিদ রাসেলের গুচ্ছ কবিতা
আমার পরিচয়
মনুষ্য জন্মগ্রহণ, বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে
দখল নাও পৃথিবীর সকল দেশ,
বিখ্যাত পাহাড়-পর্বত ও সাগর-মহাসাগরের
অক্ষর জ্ঞান অর্জনপূর্বক হজম করো
সাহিত্য ও শিল্প গবেষণার শাখা-প্রশাখা
সুস্থ থাকার চেষ্টায় লড়াই হোক
সব রকমের অসুস্থতার বিপক্ষে
প্রকৃতি আর বিকৃতির পার্থক্য সুস্পষ্ট করো
আর ইতি টেনে দাও
যত অভিযোগ ও কানাকানির
তুমি ঘোষণা দাও নিজস্বতার
কথা বলো, চিৎকার করো,
উচ্চস্বরে এঁকে দাও তোমার অভিমত 'হ্যাঁ অথবা না'
নিজের উপাধি ঠিক করে নাও নিজেই
কেউ উদ্ধার করতে আসবে এই ভরসায় থাকলে
তুমি হয়ে উঠবে সকলের ক্রীতদাস "অনুগত"
ঝেড়ে ফেলো সবকিছু, মুছে দাও জন্ম দাগ
আঙুল উঁচিয়ে সবাইকে দেখাও
এই সময়ে পৃথিবীর বুকে তোমার প্রসূত ভাগ।
আধখানা জীবন
গণিত ও বিজ্ঞান শাস্ত্রে
এক এবং শূণ্য অনেক গঠনমূলক
কিন্তু জীবনের হিসেবে
আমার কাছে একের মর্যাদা বেশি
কারণ, শূন্যতার যে হাহাকার
তা বয়ে চলার সাহস আমার নেই
আবার একের প্রতি অগাধ ভালোবাসা
ও বিশ্বাসযোগ্য পাহারায়_ যত্নে ও সঙ্গমে
অসংখ্য প্রিয়জনের ভিড় হয়, আলোর মেলা বসে
ওইসব আকাশ-তাঁরা যখন সমস্ত রাত পার করে
তখন ভোরের সূর্যোদয়ে মিলিয়ে যায় শূন্যতা
যেনো পরমের গভীর দৃষ্টিপাতের মহিমায়
হাজারো একের জটলা পেরিয়ে শূন্যতার আবির্ভাব।
দূর্যোগ দু'মুখো
দূর পথের শেষে প্রান্তে
আলোর মিছিল
হয়তো অনেক পরিচিত মুখের
দেখা মিলবে না
এমন অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাবে
যারা সজাগ ছিলো না
তবু ওই লাল সূর্য ও মায়াবী রাতের শোভা কমবে না কিছু
আমাদের গল্পটা জাগতিক না জাদুবিদ্যার
সে বিচারসভায় নেতৃত্ব দিবে নানান হুজুগ
এমনতর বাঙাল যেনো পরবর্তী প্রজন্ম মিস্ না করে!
জুলফিকার আলীর কবিতা
নিমবার্তা
বারান্দায় টবে দাঁড়িয়ে থাকা নিম গাছটি এখন অনেক প্রাণবন্ত।
ক'দিন আগেও পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে ও খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল!
ওর শাখা প্রশাখা, পত্ররাজির দিকে তাকালেই বোঝা যেত ওর কষ্ট গুলো! সবুজ রং হারিয়ে পাতা ঝরার প্রহর গুণছিল যেন!
আজ, বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে, শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে, পত্রের মর্মর ধ্বনি তুলে সে জানান দিচ্ছে তার উচ্ছ্বাস বার্তা।
মানুষের প্রতি প্রকৃতির চরম প্রতিশোধ দেখেও, নিম গাছটির একটুও যেন দুঃখ বোধ নেই।
অথচ, যে কিনা বৃক্ষ সমাজে মানুষের পরম বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বরং মুচকি হেসে বলছে, "হে মানুষ, কোথায় গেল তোমার ক্ষমতা? এতো দাম্ভিকতা, তোমাদের শক্তির মহড়া? মহাকাশ দখল নিয়ে তোমাদের আধিপত্য বিস্তার আজ গেল কোথায়?"
"তোমাদের পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, কোটি কোটি বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট, সামান্য এক ভাইরাসের কাছে, কি লজ্জাজনকভাবেই না আত্মসমর্পণ করল মাত্র ক'দিনেই!"
"মানুষের পৃথিবীকে মাত্র কয়েকদিনেই স্তব্ধ করে দিয়ে জানিয়ে দিল, তোমাদের এত; এত ক্ষমতা প্রকৃতির কাছে ঠুনকো খেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।।"
"তাই, প্রকৃতির সামান্য হুমকিতে সমস্ত পৃথিবীকে নিজেরাই নিজেদের কারাগার বানিয়ে বন্দি পশুর মত আশ্রয় নিলে নিজেকে রক্ষার জন্য। আর বন্যরা তোমাদের লোকালয়ে এসে হুঙ্কার দিয়ে জানিয়ে দিয়ে গেল এই পৃথিবী শুধু মানুষের নয়।"
"প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের রয়েছে প্রকৃতির প্রতি সম অধিকার। হোক সে অতি নগণ্য জীব, অণুজীব, এমনকি জড়!"
"আর প্রকৃতি তার সন্তানদের সম অধিকার রক্ষায় বদ্ধ পরিকর।"
"প্রকৃতি যদি নিরাপত্তা না দেয়, তাহলে তোমাদের মনুষ্য তৈরি নিরাপত্তা বেষ্টনির নুন্যতম ক্ষমতা নেই যে তোমাদের রক্ষা করবে!"
"তাই, প্রকৃতির সাথে ক্ষমতার বাহাদুরি দেখাতে এসো না হে নির্বোধ মানুষ!! অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ কর।।
বন্ধ কর সাম্প্রদায়িকার নামে, রাজনীতির নামে, নিরাপত্তার নামে ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যাযজ্ঞ!!"
"তোমাদের কোটি কোটি বিলিয়ন ডলারের যে অস্ত্র সামান্য #করোনা নামক ভাইরাসের মোকাবিলা করতে অক্ষম, নিরাপত্তার নামে নির্বোধের মত সেই অস্ত্রের বড়াই করা যে নিছক বোকামি, তা প্রকৃতি নিশ্চয়ই হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে তোমাদের!"
"হে মনুষ্যজাতি, তোমাদের মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে- প্রকৃতির কাছে মাথা নত কর।
প্রকৃতি ও এর প্রতিটি উপাদানকে ভালবাস।
প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যেও না।
তাকে তার স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দাও। নয় তো, তোমাদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে!"
"কারণ, প্রকৃতি তখনই তোমাকে ভালবাসবে যদি তুমি প্রকৃতিকে ভালবাস।।"
সমস্ত বাসা জুড়ে শুনশান নিরবতা!
নিম গাছটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে- মনে হলো, আমার কাছ থেকে কিছু একটা শুনতে চাচ্ছে।
আমি বললাম- আমি যদি প্রকৃতিকে ভালবাসি তাহলে প্রকৃতিও আমাকে ভালবাসবে।
নিম গাছটি আবারো মুচকি হেসে বললো- "ঠিক তাই।"
কাদম্বিনী তনয়ার গুচ্ছ কবিতা
কাছে থাকি
শুধু তুমি চাওনি বলেই
নিজেকে গুটিয়ে রাখি প্রতিমুহূর্তে!
অলিন্দে জমা পড়ে অভিমান,
অভিযোগ আর আক্ষেপে
ভরিয়ে তুলি জীবনের সুখ পেয়ালা।
বাড়ে অভিমান স্রষ্টাতেও।
জাগতিক সব কিছুতেই বিতৃষ্ণার ছড়াছড়ি!
তোমার শূন্যতা জমিয়ে,
নৈঃশব্দের আড়ালে লুকিয়ে রাখব নিজেকে;
ফিরব না আর কোলাহলে।
খুব গহীনে বাজলে কোথাও বীণা,
হাত বাড়িও, পাবে দেখো;
কাছেই থাকি!
মেঘমালা (১)
প্রিয়,
আমার শেষের অপ্রেমে মৃত্যু হোক ইমন কল্যাণ।
কি নিদারুণ প্রতিশোধ শেষ হয় ছাদে হারানো প্রথম রোদ।
নিঃশেষ হয়ে চলে প্রেম,অপ্রেম, দহন।
দীর্ঘ হয়ে যাক নিঃসঙ্গ রাত।
হাতে ঝরুক কফিনে রাখা কদমের দীর্ঘশ্বাস।
বৃষ্টির ঘ্রাণে ছড়িয়ে থাক তোমার আমার অপ্রেম।
অবরুদ্ধ কার্ণিশ চুঁইয়ে ঝরুক বেদনারা।
তবু নিভৃতে আপনার করস্পর্শে হাসিটুকু পাঠিও।
তুমিই তো পূর্ণতা
এই যে এত এত মুহূর্ত_
তোমার ভাবনায় জড়ো হয়ে থাকা,
এই যে না ছুঁতে পারার অনুযোগ,
এই যে তোমায় না পাওয়া মুহূর্তগুলো_
জমিয়ে যাই খুব নিরবে দীর্ঘশ্বাসে,
এই যে অভিমানে অল্প অল্প দূরে রই,
এই যে তোমার উপর আরোপকৃত সকল অভিযোগ,
খুব গোপনে বাক্সবন্দী করি,
এই যে অনুরণনে থেকে যাও তুমি সারাটাক্ষণ,
এই যে তোমার অপেক্ষায় প্রহর গুনি,
ক্লান্তিহীন অপেক্ষার এই যে রাত্রিগুলো নির্ঘুম,
এই যে তোমার মিষ্টি হাসিবিহীন
আমার ভালো লাগাগুলো,
মুহূর্তেই বিলীন হয় বিমর্ষতায়;
এসবের কিছুই জানবে না তুমি!
কিছুই জানা হবে না তোমার। জানা হবে না তোমার;
কেউ কেউ নিরব রয়;
নীরবে শত ক্ষরণের জ্বালা সয়!
হাসনাত জিলান কাব্য'র গুচ্ছ কবিতা
ঈদের খেয়াল
বাঁকা চাঁদের লটকে থাকা,
ছেঁড়া গেঞ্জি কি যেনো এক বাতাস ছোঁয়!
আমরা তাকে নিয়ন আলোয় আটকে রাখি,
পথের মানুষ স্নিগ্ধ গন্ধে তাকে জড়ায়।
ঈদ এসেছে ফিরে,
খুশি-আর আনন্দের মুগ্ধতায়।
দামী পোশাক উষ্ণ বাহার রূপ চর্চার তড়িঘড়ি,
পথ থেকে পথে ওরা কুড়ায় আনন্দ ঠোঙ্গা!
প্যাকেজ খু্ঁজে দরদামের ভিড়ে,
মেহনতি হাত খোঁজে জড়তার উল্লাস!
ঈদ এসেছে ফিরে,
পরিচিত সব মুগ্ধতা নিয়ে নির্মম চিত্রে।
ঈদের খুশি
বাঁকা চাদে হাসি মুখ,
এসেছে ঈদ স্বর্গ সুখ!
রমজানের রোজা শেষে,
মিলন মেলায় সফল বেশে।
বন্ধু-শত্রু,ধনী-গরীব
কি আছে তার ভেদাভেদ?
দামী থলে-রাস্তা ধারে
সকল বিভেদ থাকুক পড়ে।
এসেছে ঈদ-পবিত্রতা আর মুগ্ধতা,
চল হই এক; বিলাই আনন্দে খুশি শুদ্ধতা।
আচ্ছাদন
নীল চাদরে তোমায় ঢাকতে গিয়ে,
আকাশ তখন গধুলী বায়না ধরে।
গভীর রাতে ঝিঁঝি পোকার ডাক,
জোনাকি সমাবেশ রূপকথা গল্প আঁকে।
একচালা ঘর,দক্ষিন জানালা খোলা,
দূরের মাঠে জোৎস্না স্নানে বট বৃক্ষ নাচে।
সূর্য ঘুমে ভালোবাসা পায় দিশা,
দিন হলে সব ব্যস্ততা পায় পেশা।
শহীদুল ইসলাম অর্ক
পরাধীনতা
কাল ঈদ। এইমাত্র খবর এল। সবার ভেতরে সাজ সাজ ভাব। গুটিকয় তরুন রাস্তার পাশে সাউন্ড সিস্টেমে হাই ভলিউমে জেমসের গান বাজাচ্ছে। আর আমি স্মৃতিতাড়িত হচ্ছি শুনে শুনে, দীর্ঘশ্বাস ফেলছি এই ভেবে যে, এবারও বাড়ি যাওয়া হলনা।
এই বিভূঁইয়ে আছি কতদিন, মনে নেই। হয়তবা দশ মাস, হয়তবা দশ বছর! জীবনের সমূহ সময় নিলামে তুলে দিয়েছি কতকাল আগে,তার খবরও নেই। মা বাবা ভাই বোন বন্ধু স্বজনবিহীন কত রাত্রিদিন একই খাঁচায় একা একা বেঁচে আছি। প্রানভরে শ্বাস নেবার উপায় কই এই রক্তাক্ত রঙ্গমঞ্চে?
একসময় বন্ধুরা মিলে ঈদ উদযাপন করতাম তুমুল আনন্দে। না থাক নতুন কিছু, আনন্দের সবকটি বাঁধ ভাঙ্গত আমাদের হাতে হাতে। মাঘের শীত সোনালি সোনালি চিলকে তাড়া করে ঘরে নিতে পারলেও, পারতনা আমাদের। আমাদের বাসায় হত ভুনাখিচুরির আয়োজন। রাত্রির কয়েকটি প্রহর পেরিয়ে যায় আমাদের হাসি গান আড্ডায়। আহ্, কী চমৎকার ছিল সেসব দিন। জেমস্, হাসান, আইয়ূব বাচ্চুর তারুন্যের গানগুলি বাজত সারাক্ষণ। মাঝে মাঝে কবিতার এ্যালবাম। শেষ রাতের দিকে সেগুলি বাজাতাম। আড্ডার শেষদিকে বিরহের কবিতার রেকর্ডগুলি আমাদেরকে দুঃখের এক সুখানুভূতি উপহার দিত। ধীরে ধীরে চলে যেত সবাই। আমার বাসায় এরপর আমি একা! শূণ্যতার এক চিরন্তন স্পর্শ আমাকে ব্যথিত করে তুলত সেই প্রহরগুলিতে। তবুও সেসব দিনই সুন্দর। আমি প্রানপনে ফিরে চাই সেই দিনগুলি।
গুনাইগাছ ব্রিজ থেকে থানামোড়,চাইনিজ টি স্টল, মায়ের দোয়া, খান, দুই বোন, থানামোড় থেকে পোষ্ট অফিস মোড়, থানামোড় থেকে জোদ্দারপাড়া হয়ে কাঁচারি মাঠ, গোবিন্দ জিউ মন্দির, ফ্রেন্ডস ফেয়ার, শহীদ মিনার, আনসার চাচার চায়ের দোকান, মাঝে মাঝে অচিনবৃক্ষের ছায়াতল- এইতো ছিল আমাদের পদতলের মানচিত্র। কিন্তু আজ সেসব থেকে বহুদূরে অচেনা লোকের ভিড়ে ডানাভাঙ্গা পাখির মত উড়াউড়ি করি!
আপন আলমগীর, অনিকেত মাসুম, জুলফিকার, আংকেল খান, রবিন বাবু, শাহিন মাহমুদ, আজাদ আলমগীর, মনজু খান - আমার নিত্যদিনের সহচর, মনে পড়ে তাদের প্রাত্যহিকতার নানা কর্মে। মনে পড়ে সুমন্ত বর্মণ দাদাকে। দাদার নাটকগুলিকে মিস করি। নাটকের প্রতিটি চরিত্রকে মিস করি খুব। মাঝে মাঝে আমার মধ্যে কথা বলে বৈকুণ্ঠ পুরুত! শহীদমিনার মুক্তমঞ্চ, বইমেলাকে মিস করি খুব। ক্লান্ত বিকেলে পৌর পার্কের আড্ডা মিস করি খুব।
ভাবি খুব,যদি ফিরে পাই সেই পুরোন দিন তবে, শীতল সন্ধ্যায় একবার গিয়ে বসব গুনাইগাছ ব্রিজে, দেখব কত চেনা স্বজনের যাতায়ত। হাটব একবার সেই চেনা মানচিত্রে, বন্ধু, পরিচিত স্বজনদের হাতে হাত রেখে বলব, আমরা করব জয়। চায়নিজে চা খেতে খেতে কড়কড়ে একটা কবিতা লিখে ফেলব। সুমন্ত দা শোনাবেন নতুন এক নাটকের স্ক্রিপ্ট। আমাকে দেবেন সেই চরিত্রটা যেটা আমি করতে চাইনা। মাসুম তার স্বভাবসুলভ হাস্যরসে ডোবাবে আমাদের। আলমগীর আংকেল শোনাবেন সব ঐতিহাসিক ডায়ালগ। এইসবের রসায়নে তৈরি হবে পারফেক্ট সুখি সুদূর অতীতের বর্তমান সংস্করন।
কিন্তু হায়, স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, বাস্তবতা হো হো করে হেসে উঠে আমাকে ব্যঙ্গ করে। আর আমি পরাজিত সৈনিকের মত পড়ে থাকি ছিন্নভিন্ন। পরাধীনতার করাল সময় আমাকে অক্টোপাসের মত গিলতে থাকে চারপাশ থেকে!
নীরব চন্দন
ইকলু ভাই এখন টাকলু
প্রচন্ড গরমে ইকলু ভাইয়ের মাথা যখন চরম পর্যায়ের গরম, ঠিক তখনই ইকলু ভাইয়ের মাথায় একটা নতুন আইডিয়া চলে আসল। ইকলু ভাই আবিষ্কার করলেন, ‘শুধুমাত্র মাথায় চুল থাকার কারণেই মাথা এত গরম হয়ে যায়।’ কিন্তু এর সমাধান কী? এর সমাধান একটাই। তা হলো- মাথার সমস্থ চুল ফেলে দেয়া। সহজ কথায় যাকে বলে ন্যাড়া হওয়া। ইকলু ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘তিনি ন্যাড়া হবেন।’ সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইকলু ভাই সেলুনে গিয়ে ন্যাড়া করে আসলেন। কিন্তু সমস্যা হলো, সেলুনের নাপিত খুব চালাকি করে ইকলু ভাইয়ের পিছনের কিছু চুল রেখে দিয়েছে। যাতে করে ইকলু ভাইকে জব্দ করা যায়। ইকলু ভাই বিষয়টি বুঝতে পারলেন না। ইকলু ভাই ন্যাড়া করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এমন সময় কিছু লোক ইকলু ভাইকে দেখে প্রচন্ড রকম শব্দ করে হাসতে লাগল। ইকলু ভাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেন না। ইকলু ভাই ভাবলেন, ‘ভালো কাজে সমালোচনা থাকবেই।’ তাই ইকলু ভাই কোন দিকে কান না দিয়ে আপন মনে হেঁটে চলেছেন। এমন সময় একজন লোক ইকলু ভাইকে ডেকে বলল, ‘ইকলু তোমার মরুভূমিতে গাছ আসলো কোথায় থেকে?’ ইকলু ভাই তার কথার কোন জবাব না দিয়ে আবারও হাঁটতে লাগলেন। এরপর আরও কিছু দূর যাবার পর ইকলু ভাইয়ের পরিচিত এক ছোট ভাই ইকলু ভাইকে সালাম দিয়ে বলল, ‘ভাই, আপনার মরুভূমিতে গাছের জন্ম হলো কিভাবে?’ ইকলু ভাই এবারও কোন জবাব না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। ‘লোকে তাকে এমন প্রশ্ন করছে কেন?’ এর কোন কারণ খুঁজে পেলেন না ইকলু ভাই। এরপর একটু সামনে যেতেই ইকলু ভাইয়ের সাবেক প্রেমিকা ইকলু ভাইকে ডেকে বলল, ‘ইকলু, তুমি কি সারাজীবন বোকাই থেকে যাবে?’ তুমি ন্যাড়া করেছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু পেছনে চুল রেখে দেয়ার কোন মানে হয়?’ ইকলু ভাই তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে পেছনে হাত দিয়ে বুঝতে পারলেন, আসলে তার সাথে কি ঘটানো হয়েছে। ইকলু ভাই আর দেরি করলেন না। খুব দ্রুত অন্য একটি সেলুনে গিয়ে পেছনের চুলগুলো ফেলে দিলেন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হলো না। এখন ইকলু ভাই রাস্তায় বের হলেই দুষ্ট লোকেরা ইকলু ভাইয়ের মাথায় টোকা দেয় এবং তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠে। ইকলু ভাই বিষয়টিতে প্রচন্ড রকম বিরক্ত হন। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। ফলস্বরূপ ইকলু ভাইয়ের মাথা আরও গরম হয়ে যায়। অবস্থা এমন যে, ইকলু ভাই তার নিজের মাথায় হাত দিতেই ভয় পান। ইকলু ভাই ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। কারণ ন্যাড়া মাথা নিয়ে বাহিরে বের হওয়াই ইকলু ভাইয়ের জন্য এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হঠাৎ ইকলু ভাইয়ের ‘শেয়ালের লেজ কাটা’ গল্পটি মনে পড়ল। ইকলু ভাই ভাবলেন, ‘আমার মতো যদি আরও আট-দশজন মাথা ন্যাড়া করে তাহলে তো সমস্যার সমধান হয়।’ কিন্তু তারা মাথা ন্যাড়া করবে কেন? ইকলু ভাই আবারও ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ ইকলু ভাইয়ের মাথায় একটা প্ল্যান আসল। তা হলো- সবাইকে ন্যাড়া মাথার উপকারের কথা জানাতে হবে। তাহলেই সবাই মাথা ন্যাড়া করবে। এজন্য ইকলু ভাই একটি পোষ্টার বানালেন এবং তা নিজের পিঠে ঝোলালেন। যে পোষ্টারে বড় বড় করে মাথা ন্যাড়া করার সুবিধাগুলো লেখা আছে।
- ন্যাড়া মাথায় মাথা ঠান্ডা থাকে।
- ন্যাড়া মাথায় চুল আচড়ানোর ঝামেলা নেই।
- ন্যাড়া মাথায় চুলের শ্যাম্পু ও তেল খরচ বেঁচে যায়।
- ন্যাড়া মাথায় ঘনঘন চুল কাঁটার প্রয়োজন হয় না।
- ন্যাড়া মাথা একটি ঐতিহাসিক আর্ট।
ইকলু ভাই এখন বাড়ির বাহিরে গেলেই পোষ্টারটি তার পিঠে ঝুলিয়ে বের হন। এভাবে চলতে থাকল প্রায় চার মাস। কিন্তু তার পরিচিত কেউ-ই মাথা ন্যাড়া করল না। অন্যদিকে ততদিনে ইকলু ভাইয়ের মাথায় মাথাভর্তি চুল গজিয়েছে।
0 Comments