আর একবার আমি আর মা যাচ্ছিলাম মামাবাড়ি জবলপুরে। দুপুরে বোম্বে মেল ভায়া এলাহাবাদে চড়ে এলাহাবাদ পার করার পর যখন শংকরগড় এল এক বিরাট ঝাঁকুনি অনুভব করলাম। ট্রেনের সামনের কয়েকটি বগি নাকি লাইনচ্যুত হয়েছে।লাইন সারাতে লেগে গিয়েছিল কয়েক ঘন্টা। পরদিন ভোরে জবলপুরে নামতে হয়েছিল প্রায় বারো ঘন্টা পর।গরম কাল ছিল, তাই সেই সময়টায় দেখা দিয়েছিল চরম জল সমস্যা।কোন স্টেশন না হওয়ায় জল নিয়ে শুরু হল অনভিপ্রেত বচসা সহযাত্রীদের মধ্যে।দেখেছিলাম একবাড়ির ,মানে দুই জায়ের মধ্যে কে বেশি জল খরচ করেছে তাই নিয়ে দোষারোপ একেবারে চুলোচুলির পর্যায়ে পৌছল।দেখেছিলাম মানুষ যখন অকারণে হেল্পলেস অবস্থায় পড়ে তখন কেমন দিকভ্রান্ত হয়ে অদ্ভুত আচরণ করে।
আবার উনিশশো চুরানব্বইএ আমার বিয়ের অষ্টমঙ্গলার পরদিন হানিমুনের জন্য আমরা যাব গ্যাংটক।আমার এক দাদা সেই যাত্রার যাবতীয় খরচ স্পনসর করেছিল।কোন পরিচিত ট্রেনের রিজর্ভেশন না পাওয়ায় আমাদের টিকিট হয়েছিল ত্রিবান্দ্রম-গৌহাটি এক্সপ্রেসে, যাব নিউ জলপাইগুড়ি।আমার শ্বশুরমশাই তো আমাদের এক ট্যাক্সিতে চড়িয়ে দিলেন হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশ্যে।দুপুরের সেই ট্রেন 'লেট' করে এসে ছিল রাত তিনটেতে।আমরা পুরো সময়টা কাটিয়েছিলাম হাওড়ার প্রথম শ্রেনীর বিশ্রামাগারে। এই হাওড়া স্টেশনের জনসমুদ্রে আমরা নববিবাহের পর কেমন যেন অনন্য একা একা কাটিয়েছিলাম দুজনে।সেই কয়েক ঘন্টা যে কখন কেটে গিয়েছিল কে জানে, বুঝতেই পারিনি।
একবার হল কি , আমার শিলিগুড়ি যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু কোন টিকিট পাচ্ছিলাম না।তাই সল্টলেকের করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডে রয়েল ক্রুইসার ভলভো বাসে চড়লাম রাত সাড়ে আটটায়।কিন্তু কপালের ফের যায় কোথায়? তাই পরদিন সকাল সাতটায় যার শিলিগুড়ি ঢোকার কথা সেই বাস পৌছল বিকেল পাঁচটায়,কৃষ্ণনগর আর ডালখোলার জ্যামে আটকে,পরেরদিনের সব প্রোগ্রাম ওলট পালট করে দিয়ে।
ভারতীয় রেলে আর বঙ্গীয় পরিকাঠামোয় দু পাঁচ ঘন্টা দেরী 'নরমাল' এর মধ্যেই পড়ে,তাই সেই রকম অজস্র আরো 'লেট' এর অভিজ্ঞতা গুলো এই বিবরণের বাইরেই রাখলাম।
তবে জন্ম একটু তাড়াতাড়ি হলেও আজ ছাপ্পান্নোর্ধ এই জীবনে মনে হয় , এখনো তো অনেক কিছুই দেখা বাকী থেকে গেল, হল না অনেক রূপ, রস, গন্ধ আস্বাদন। তবে শেষের সে দিন যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন আরও একটু 'লেটেই' চলুক না এই জীবন গাড়ী॥
0 Comments