Ticker

6/recent/ticker-posts

মৃধা আলাউদ্দিনের দীর্ঘ প্রেমের কবিতা

 

কোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়...



কোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় তোমাকে দেখছিলাম

বেহায়া বাতাস উড়াচ্ছে তোমার চুল শাড়ির আঁচল

স্বর্গ-অপ্সরীর মতো কটিদেশ, নদী নিতম্বসহ তুমি চলে যাচ্ছ-

 

আমি বিলীন হয়ে যাচ্ছি সন্ধ্যার শেষ সূর্যের মতো

মথিত সঙ্গমশেষে দিগন্ত যেখানে নুয়ে পড়ে-

গোলাপি ঠোঁট, তোমার মায়াবী চোখের মিটিমিটি তারায়।

 

একবার তুমিও চেয়ে দেখ এই নীল চোখের দিকে

ফেরাতে পারবে না চোখ- আটকে যাবে গভীর আইরিসে।

 

চলো দুজনেই ভিজে যাই কোনো নীরব নৈঃশব্দ্যে...

 

এবঙ আমাকে কাছে ডাক

জড়িয়ে ধরো

যেনো বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে যায় এই দেহমন।

 

আমাকে আর ফিরায়ে দিঅ না তোমার ওই নিপুণ সলজ্জ চোখের ভাষায়।

 

 

ছলাকলাহীন এই রাত্তিরে আমাকে ভাসাও তুমি, তোমার গ্রন্থিত সাগর-সমুদ্রে

তোমাকে ছাড়া এখন আমি একটা অস্থির অবহেলিত সময়ে পড়ে আছি।

 

দক্ষিণা বাতাসও লাগে না আমার শরীরে-

আমি একা

নিদারুণ একেলা পড়ে থাকি

সারাটা দুপুর বিকেল আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

 

তুমি এসো, এসো প্রিয়তমা! ঢেলে দাও অবিমিশ্র রোদ কামনার জল

দারুণ দহলিজে আমার...

 

প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসায় পৃথিবীতে নেচে ওঠে ব্যকুল বিমুগ্ধ ভ্রমর।

তুমি ছাড়া আশ্বিনের অমাবস্যায় ডুবে যাচ্ছে আমার সামনের মাঠ-ঘাট বৃষ্টিভেজা তেপান্তর।

অযাচিত, অন্ধকার শক্ত-শূন্য শিহরণে কেঁপে যাচ্ছে আমার সমস্ত বেলাভূমি।

 

তুমি এসো আমার এই নির্জলা নীল ভূমিতে

আপেল, আতর অথবা লেবুফুলের চাষে মগ্ন হবো দুজনে

বিপ্রতীপ মধুর হবে আমাদের এই চাষবাস, চাষের তৈজসপত্র বৃষ্টি বৃষ্টির বেসাতি-

 

যখন দেখি তোমাকে ছাড়া জোছনার তীব্র আলো আছড়ে পড়ে আমার ভিটেবাড়ি, বারান্দার চারপাশে;

আমি মর্মাহত হয়ে ফিরে আসি, আমি বারবার ফিরে আসি নৈঃশব্দ্যময় নিবু নিবু আমার জলের বিছানায়...

 

এসো প্রিয়তমা! আমরা পৃথিবীতে নামিয়ে আনি আরেকটা ঐশ্বর্যময় সাগর

মানুষের দেহঘরে আষাঢ়স্য রোদের রোশনাই।

 

তিরতির করে সামনে হাঁটি সমুজ্জ্বল তারার মতো;

পথ চলতে কখনও ব্যর্থ হয় না পাথর-প্রেমিক।

এবঙ আমি দ্রুত বুঝতে পারি

প্রেমের সরলতা

সফলতা

ব্যর্থতা 

 

ফিরে যাওয়া কোনো বিবসন মানবীকে আমার ভালো লাগে না-

 

তুমি কি ফিরে যেতে চাও কোনো এক অবারিত অন্ধকার গহ্বরে?

খুলে দিলাম দিগন্তসম খাঁচার দুয়ার...

 

বীক্ষ্যমাণ বশরাই গোলাপের আশীর্বাদে আমি পৌঁছে যাব আমার গন্তব্যে

অমীমাংসিত কোনো সৌন্দর্যের ভেতর আমি পৌঁছে যাব

আমার ব্যথার বিড়ম্বনাসহ...

 

আমি গলে গলে যাব কোনো এক শান্ত-শুভ্র শ্রাবণ সন্ধ্যায়

আমাকে আর পাবে না

আমি গলে গলে যাব

গলে গলে...


[ কবি পরিচিতিঃ মৃধা আলাউদ্দিন, মাতা : ফুলবানু বেগম। পিতা : মৃত মোসলেম মৃধা। জন্ম : ০২.০২.১৯৭৮। জন্মস্থান : কাংশী, উজিরপুর, বরিশাল। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকাতেই আছেন- নকুনি, তলনা, খিলক্ষেত, ঢাকা। মৃধা নব্বই দশকের অন্যতম নিভৃত কবিদের অন্যতম একজন। লিখছেন গল্প, কবিতা, ছড়া সমালোচনা সাহিত্য। দেশের জাতীয় দৈনিক লিটলম্যাগে নিয়মিত তার লেখা ছাপা হচ্ছে। মৃধা একজন ছন্দ সচেতন নাগরিক কবি। তার কবিতায় উঠে এসেছে সমাজের কুসংস্কার, নীতিহীন-বিপ্রতীব সময়ের ছবি, নোংরা রাজনীতি এবং একই সাথে নিপুণ কারিগরের মতো মৃধা তার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ ভালোবাসার গান গেয়েছেন। সমাজ বিনির্মাণের গাথা কবিকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে। কবির দোঁহাগুচ্ছ কাপলেটে পরিণত হয়েছে বলেই পাঠক সমাজের দৃঢ় বিশ্বাস। নিঃসন্দেহে বলা যায় সমালোচনা সাহিত্যে কবি তার নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। কবি মৃধা আলাউদ্দিনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ রৌদ্দুরে যায় মন (প্রকাশকাল : ২০০৫), প্রকাশক : রেলগাছ, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে (প্রকাশকাল : পহেলা জানুয়ারি, ২০২০। প্রকাশক : রাজুব ভৌমিক, ফিফথ এভিনিউ, ৩০তম রোড, ম্যানহাটন, নিউইয়র্ক। পরিবেশক : বার্নস এন্ড নোবল, ১২২ ফিফথ এভিনিউ, রোড, , নিউইয়র্ক-১০০১১। প্রকাশিতব্য গ্রন্থ : প্রজাপতি হয়ে গ্যাছে কোনো কোনো মাছ (কবিতা), জঙধরা পিনালকোড (গল্পগ্রন্থ), চড়ইয়ের চিড়িপ চিড়িপ শব্দ (কিশোর কবিতা), শুঁড়িখানার নরম দেহ (দোঁহা কাব্যগ্রন্থ), অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন (দোঁহা কাব্যগ্রন্থ), আল মাহমুদ অন্যান্য সন্দর্ভ প্রভৃতি। কবি মৃধা আলাউদ্দিন দুই ছেলে সন্তানের জনক। মৃধা শব্দশীলন সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চেয়ারম্যান। পুরস্কার সম্মাননা : অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক। বঙ্গভূমি সাহিত্য সম্মাননা, বঙ্গভূমি সাহিত্য পরিষদ। শীর্ষবিন্দু সাহিত্য পদক, শীর্ষবিন্দু লিটলম্যাগ। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতিপ্রাপ্ত ক্রেস্ট স্বর্ণপদক। সম্পাদনা : একটি কাব্যভাঁজ (লিটলম্যাগ প্রায় ১০টি সংখ্যা বের হয়ে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে লিটলম্যাগটি) মৃধার সম্পাদনায় বের হয়েছে সিলেটের মরহুম কবি মিছবাহুল ইসলাম চৌধুরীর কবিতাশেরশাহ’ (একটি মহাকাব্য) কবি মৃধা আলাউদ্দিন বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত আছেন। ]

Post a Comment

0 Comments